নোনা হল ইট বা পাথরের তৈরী দেয়ালে সাদা সাদা লবনের অধঃক্ষেপ যা দেয়ালের সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব নষ্ট করে।
Merriam Webster’s Collegiate Dictionary মতে পুষপায়ন (Efflorescence) বা দালানের নোনা হল দ্রবনীয় লবনের দ্রবন হতে পানির বাস্পীভবনের ফলে দালানের দেয়ালে লেপ্টে থাকা লবনের অধঃক্ষেপ।
কেন হয়?
=========
তবে নোনা শুধুমাত্র নির্মাণ সামগ্রীতে দ্রবনীয়র লবনের উপস্থিতির ফল নয়, তার সাথে নানা কারন জড়িত। প্রকৃত পক্ষে যে অবস্থানের উপর নির্মাণ কাজ হবে এবং যে নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহৃত হবে তার উপর অনেকাংশে নোনা ধরা নির্ভরশীল।
(১) অস্থায়ী নোনা, যা সহজেই ব্রাশ দিয়ে ঘষে বা পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করা যায়।
(২) স্থায়ী নোনা, যা সহজেই ব্রাশ দিয়ে ঘষে কিংবা পানি দিয়ে পরিসকার করা যায় না। সাদা পাউডারের মত দেয়ালের গায়ে বা কাঠামোতে লেপ্টে থাকে।
দালানের নোনা ধরা একটি সময় সাপেক্ষ সমস্যা এবং ঋতুর সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। তাই নোনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা দালান তৈরীর অংশ বলে গণ্য করা উচিত, কেননা-
কি কি অসুবিধা হয়ঃ
===============
* নোনা ধরার ফলে অস্বাস্থ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়,
* ছোপ-ছোপ দাগ প্লাষ্টার এমনকি চুনকামেও ঢাকা পড়ে না,
* নোনার সংস্পর্শে কাগজপত্র, কাপড়-চোপড়,কাঠ ইত্যাদি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়,
* প্লাষ্টার নরম হয়ে করে খসে পড়ে,
* সর্বোপরি দালানের সৌন্দর্যহানী ঘটে,
কারন সমূহ
কি কি প্রধান কারনে নোনা হয়
======================
নানা কারনে নোনা ধরতে পারে, তবে নিম্নলিখিত কারনই প্রধান
* মেঝে ও দেয়ালে সঠিক ভাবে সিক্ততা নিরোধক স্তর না বসানোর ফলে,
* সুষ্ঠ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে,
* পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের সুযোগ না থাকলে,
* গাঠনিক ত্রুটিজনিত কারনে,
* বাড়ী তৈরীর সময় স্বল্প পোড়ানো ইট ব্যবহৃত হলে,
* বাড়ী তৈরীর উপকরণ যেমন- ইট, বালি,সিমেন্ট, পানি প্রভৃতির মধ্যে লবনের পরিমান ২.৫% এর বেশী হওয়ার কারনে,
* প্লাষ্টারের নিচে পানির লাইনের অবস্থান হলে,
* দেয়ালের যে সব অংশে রোদ কম পড়ে সেসব জায়গা অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকায় বাতাসের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বিন্দু বিন্দু পানিরূপে দেয়ালে জমা হতে থাকে এবং প্লাষ্টার বা ইটের অভ্যন্তরে যে সব লবন থাকে তা দ্রবীভূত করে নোনা ধরায় সাহায্য করে
=================
নোনা প্রতিরোধ করার জন্য বাড়ী তৈরীর আগে ও বাড়ী তৈরীর সময় বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত। কারণ বাড়ী তৈরীর উপকরণ, বাড়ীর অবস্থান, গাঠনিক ত্রুটিজনিত কারন, বাড়ীর আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা প্রভৃতির উপর অনেকাংশেই নোনা ধরা নির্ভরশীল। তাই নোনা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত।
সাধারনতঃ দুই ভাবে নোনা ধরা প্রতিরোধ করা যায়, যেমন-
(ক) স্বাভাবিক উপায়ে।
(খ) কৃত্রিম উপায়ে।
*স্বাভাবিক উপায়ে
===============
যে সব জমির পানি নিষ্কাশনী ব্যবস্থা নেই বা পানি নিষ্কাশনী ব্যবস্থা ভাল নয়, সেখানেই বুনিয়াদ বা কাঠামো স্যাঁতস্যাঁত হয়ে উঠার সম্ভাবনা বেশী। সেজন্য বাড়ীর চারপাশে ভাল ড্রেনের ব্যবস্থা রাখতে হবে, ড্রেনের ঢালকে বাড়ী থেকে দূরে নিয়ে পানি ফেলে দিলে বুনিয়াদের তলে পানি জমতে পারবে না। মেঝে বা কাঠামোকে পানিনিরোধক করার জন্য নির্মাণ কালে বিশেষ যত্নবান হতে হবে।
প্রয়োজনীয় আলো-বাতাস চলাচলের মাধ্যমে
*কৃত্রিম উপায়ে
============
এই ব্যবস্থা দুই ভাবে হতে পারে, যেমন- বাইরের দিকের গাত্র এবং ভিতরের দিকের গাত্র। যেহেতু বাইরের দিক হতেই পানি বুনিয়াদ বা কাঠামোতে প্রবেশ করে সেজন্য বাইরের দিকের গাত্রক ব্যবস্থা ভিতরের দিকের গাত্রক ব্যবস্থা চেয়ে বেশী কার্যকরী। বাইরের দিকের গাত্রের সিক্ততা নিরোধক করার সহজতম ব্যবস্থা হচ্ছে, ইটের জোড়াই মুখগুলো খুলে পয়েণ্টিং করা এবং পরে ভাল করে প্লাষ্টার করা। ভিতরের দিকে প্লা হয়। সাধারণতঃ বিটুমিন শীট, প্লাষ্টিক শীট, মেটাল শীট. ম্যাষ্টিক এ্যাসফাল্ট ইত্যাদি সিক্ততা প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এই ব্যবস্থায় কংক্রিটের সংগে বা সিমেন্ট বালি মস্লার সাথে পানি নিরোধক যৌগ মিশিয়ে পানি প্রতিরোধকতা সৃষ্টি করা হয়। লক্ষ্য করা যায় যে, অন্তস্থক পানি নিরোধক ব্যবস্থাই সবচেয়ে কার্যকরী এবং নোনা ধরা প্রতিরোধ করার জন্য অধিকতর উপযোগী। যেহেতু স্যাঁতস্যাঁতে ভাব হতেই নোনা ধরার উৎপত্তি, সুতরাং যে প্রকারেই হোক বাড়ীর কাঠামো বা দেয়াল সম্পূর্ণরূপে পানি নিরোধক করলেই নোনা ধরা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে সিমেন্ট বালি বা মর্টারের সাথে সোডিয়াম সল্ট অব ফ্যাটি এসিড্স, ষ্টিয়ারিক এসিড, পালমিক এসিড ইত্যাদি সংযোগ করতে হয়।
এই ব্যবস্থায় সিক্ততা প্রতিরোধক স্তর বসানো
===========
দালানের নোনা হল দ্রবণীয় লবণের দ্রবণ হতে পানির বাষ্পীভবনের ফলে দালানের দেয়ালে লেপ্টে থাকা লবণের অধঃক্ষেপ। সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে আর্দ্র জলবায়ু, প্রবল বৃষ্টিপাত ও গাঁথুনিতে জমা পানির প্রভাবেই নোনা ধরে। নোনা ধরার ফলে অস্বাস্থ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়, ছোপ ছোপ দাগ প্লাস্টার এমনকি চুনকামেও ঢাকা পড়ে না, নোনার সংস্পর্শে কাগজপত্র, কাপড়-চোপড়, কাঠ ইত্যাদি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়, প্লাস্টার নরম হয়ে খসে পড়ে, সর্বোপরি দালানের সৌন্দর্যহানি ঘটে। তাই নোনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা দালান তৈরির অংশ বলে গণ্য করা উচিত।